জনসচেতনতা

বাংলাদেশে দুর্নীতিটা কেন বা কিভাবে হয় ?

এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং এর সঠিক উত্তর আমার মনে হয় প্রত্যেকটি স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো উচিত শিখানো উচিত, যেটা উন্নত দেশগুলোতে হয়। আমরাও এটার জন্য  স্কুল অফ এথিক্স তৈরি করতে পারি যেখানে দুর্নীতি কেন হয় সেখান থেকে মুক্তির উপায় কি সেটা নিয়ে গবেষণা হবে। উন্নত দেশগুলোতে  মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস না করলেও তাদের মধ্যে  নৈতিকতা আছে, এথিক্স আছে, দেশপ্রেম আছে শুধু এ কারণেই মনে হয় তারা অনেক উন্নত।

দুর্নীতি একটি জটিল সমস্যা, যা প্রায়ই সিস্টেমগত চ্যালেঞ্জ দ্বারা প্রভাবিত পরিবেশে বিকশিত হয়। অনেক উন্নয়নশীল দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে: প্রধানত আমি মনে করি লোভ, মানুষের মধ্যে অতিমাত্রায় তারাতারি কোন কিছু পাওয়ার আকাংখা বা প্রতিযোগিতা এবং যোগ্যতা না থাকলেও ক্ষমতা আহরণের প্রচেষ্টা মানুষকে দুর্নীতির দিকে নিয়ে যায়।

  1. বাংলাদেশে সাধারণত দেখা যায় দুর্নীতিটা শুরু হয় কিছু মানুষের অভাব থেকে, হতে পারে সেটা চাকরি বা কাজের অভাব থেকে, অর্থনৈতিক কষ্ট, সংকট, সীমিত সম্পদ, কম বেতন এবং ব্যাপক দারিদ্র্যের কারণে মানুষ প্রয়োজন মেটাতে বা জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে।

অথবা সৎ পথে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ না থাকার কারণে এবং  প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত চাহিদার কারণে ও দুর্নীতি হতে পারে। অনেক সময় বাংলাদেশে দেখা যায় সহজ সরল ভালো মানুষগুলো ঐক্যবদ্ধ নয় এবং অসৎ ব্যক্তিরায় গ্রুপ বা সিন্ডিকেট তৈরি করে তারা  অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ ভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সেটা যখন নেশায় পরিণত হয় তখন সেটা ভয়ংকর আকার ধারণ করে তখন দুর্নীতিগ্রস্তরা মানুষ হত্যা করতে  চিন্তা করে না এবং সমাজে হানাহানি বাড়তে থাকে।

  1. দুর্বল প্রতিষ্ঠান: অকার্যকর প্রতিষ্ঠান এবং দায়বদ্ধতার অভাব দুর্নীতিকে সহজতর করে তোলে। এর ফলে দুর্নীতি স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
  2. অসমতা এবং সুযোগের অভাব: উচ্চমাত্রার বৈষম্য এবং সামাজিক উন্নতির সীমিত সুযোগ মানুষকে অন্যায় সুবিধা লাভের জন্য দুর্নীতির দিকে ঠেলে দেয়।
  3. সাংস্কৃতিক চর্চা: কিছু সমাজে দুর্নীতি একটি সাধারণ প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হয়। ঘুষের মতো কাজগুলো প্রায়শই ব্যবহারিক প্রয়োজন হিসেবে দেখা হয়, নৈতিক ত্রুটি হিসেবে নয়।
  4. আইনের প্রয়োগের অভাব: যখন দুর্নীতিবিরোধী আইন কঠোরভাবে কার্যকর হয় না, বা ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা নিজেরাই দুর্নীতিতে জড়িত থাকে, তখন মানুষ মনে করে যে এমন কাজের জন্য প্রকৃতপক্ষে কোনও শাস্তি নেই।
  5. বেঁচে থাকার মানসিকতা: সম্পদের অভাবে মানুষ প্রায়শই দুর্নীতির আশ্রয় নেয় শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য বা স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা বা চাকরির মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো নিশ্চিত করার জন্য।
  6. সরকারের প্রতি অবিশ্বাস: যদি মানুষ মনে করে যে সরকারি কর্মকর্তা বা প্রতিষ্ঠান নিজেরাই দুর্নীতিগ্রস্ত, তবে তারা মনে করে যে সিস্টেমটি অন্যায় এবং নিজেরাও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়তে পারে।
  7. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রভাব বা ক্ষমতা বজায় রাখার একটি উপায় হয়ে উঠতে পারে দুর্নীতি, যা সমাজে আরও গভীরভাবে মিশে যায়।

আমাদের বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতি ও সমাজসেবা করতে গিয়ে ও অনেক সময় দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। তারা চিন্তা করে রাজনীতি ও সমাজসেবা করার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রাজনৈতিক দল ও তাদের অফিস  ম্যানেজ এবং মেন্টেন করতে অনেক টাকার প্রয়োজন হয় যে কারণে রাজনৈতিক দলগুলো অনেক সময় দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে সে টাকা যোগাড় করার জন্য । ফলে অনেকে চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ে পরে অনেকের কাছে সেটা পেশাই পরিণত হয়।  তখন তারা চিন্তা করে ছোটখাটো দুর্নীতি করে সে টাকার যোগান দেওয়া যেতে পারে বা দুর্নীতিকে দুর্নীতি মনে করেনা সেটাকে স্বাভাবিক সিস্টেম মনে করে। ফলে  নানা রকম অবৈধ  কাজে লিপ্ত হতে শুরু করে। যেমন  সুপারিশে কাজ পাওয়া বা কাজ পাইয়ে দেওয়া টেন্ডারবাজি, ঘুষের আদান প্রদান ইত্যাদি জঘন্য কার্যকলাপ। যে কারণে যোগ্য ব্যক্তি বা মেধাবীরা কাজ পায় না। যারা রাজনীতি করে শুধু তারাই কাজ পায়। তাতে বেকার সমস্যা আরো বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে রাজনীতিবিদরা  সমাজসেবা ভুলে গিয়ে নিজেদের সম্পদ আহরণে  মগ্ন থাকতে শুরু করে । বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো সভা-সমাবেশ আয়োজন করতে এবং মঞ্চ তৈরি করতেও কোটির উপরে টাকা খরচ করে সে টাকাটার যোগান কোত্থেকে আসে সেটাও দেখতে হবে যেখানে রাস্তায় মানুষ না খেয়ে  দিনাতিপাত করে। 

অনেক সময় অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের উন্নত লেখাপড়ার সুযোগ তৈরি করতে গিয়ে বা বিদেশে পাঠানোর জন্য ছোটখাটো দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে আমি এমনও দেখেছি মধ্যবৃত্ত  পরিবারে সামাজিক স্ট্যাটাসের একটা কম্পিটিশন তৈরি হয়  উচ্চবৃত্ততে পরিণত হওয়ার জন্য। অনেক সময় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বেক্তিটি পরিবারের সব চাহিদা পূরণ করতে গিয়েও ছোটখাটো দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে দুর্নীতির মাত্রা বাড়তে থাকে। এবং সেটা কালচারে পরিণত হয়।  অনেকে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার সহজ সুযোগ থাকার কারণে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়। 

এই সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে হলে সিস্টেমগত সংস্কার প্রয়োজন, যার মধ্যে রয়েছে সুশাসন নিশ্চিত করা, প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করা, সম্পদের ন্যায্য বন্টন নিশ্চিত করা এবং সকল স্তরে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা প্রচার করা। অনেক সময় অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের উন্নত লেখাপড়ার সুযোগ তৈরি করতে গিয়ে বা বিদেশে পাঠানোর জন্য ছোটখাটো দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে আমি এমনও দেখেছি মধ্যবৃত্ত  পরিবারে সামাজিক স্ট্যাটাসের একটা কম্পিটিশন তৈরি হয়  উচ্চবৃত্ততে পরিণত হওয়ার জন্য। অনেক সময় হাসবেন্ড ওয়াইফের সব চাহিদা পূরণ করতে গিয়েও ছোটখাটো দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে দুর্নীতির মাত্রা বাড়তে থাকে। এবং সেটা কালচারে পরিণত হয়।  অনেকে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার সহজ সুযোগ থাকার কারণে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়। 

তাই জনসচেতনতা অনেক বেশি প্রয়োজন।   বাংলাদেশের জন্য এখনই সময় দুর্নীতির দরজা বন্ধ করার, আর  যেন চোর ডাকাত ঘরে ঢুকতে না পারে, এখনই সময় চাদাবাজির সব রাস্তা বন্ধ করার। এক্ষেত্রে সবার আগে দুর্নীতি দমন কমিশনকে দুর্নীতিমুক্ত থাকতে হবে।